ইতিহাসের সিঁড়িতে মুশফিকুর রহিম  – আনন্দ আলো

ইতিহাসের সিঁড়িতে মুশফিকুর রহিম  – আনন্দ আলো

মামুনুর রহমান 


বাংলাদেশ ক্রিকেটের দুই দশকের যাত্রাপথে বহু আনন্দ–বেদনার গল্প আছে, আছে লড়াই–ঘাম–স্বপ্নের হাজারো স্মৃতি। সেই সব স্মৃতির সামনে দাঁড়িয়েই আগামীকাল মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আরেকটি ইতিহাস রচনা করতে চলেছেন মুশফিকুর রহিম। আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে সবকিছু স্বাভাবিক থাকলে তিনি হয়ে উঠবেন দেশের প্রথম ক্রিকেটার, যিনি স্পর্শ করবেন ১০০ টেস্টের মাইলফলক। যে পথ পাড়ি দিতে লাগে অবিচলতা, সাহস, ত্যাগ আর বছরের পর বছর নিজেকে কঠোর নিয়মে বেঁধে রাখা।

এই মহামুহূর্তের আগেই আবেগে ভেসেছেন তাঁর দীর্ঘদিনের সতীর্থ ও বন্ধু তামিম ইকবাল। যেন একসঙ্গে কাটানো শৈশব, বয়সভিত্তিক দলে ঘুম–অনুশীলন–স্বপ্ন ভাগ করার স্মৃতিগুলো হঠাৎ করেই ফিরে এসেছে তার কাছে। নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে মুশফিকের একটি ছবি পোস্ট করে তামিম লিখেছেন—

“তোকে নিয়ে বলার আছে হাজারো গল্প। সেই ছেলেবেলা থেকে তোকে দেখেছি—ওঠা-নামা, ব্যর্থতা-সাফল্য, কান্না-হাসি… সবকিছুর মধ্যে একটাই জিনিস কখনো বদলায়নি, তোর পরিশ্রম। কোনো একদিন নিশ্চয়ই বলব সব।”Mushfiq

মুশফিকের ক্রিকেটযাত্রাটা অন্যদের মতো নয়। তিনি কখনো দলের সবচেয়ে প্রতিভাবান খেলোয়াড় ছিলেন না—কিন্তু ছিলেন সবচেয়ে পরিশ্রমী, সবচেয়ে নিয়মিত, সবচেয়ে নিবেদিত। অনুশীলন শেষে যখন সবাই ড্রেসিংরুমে, মুশফিক তখনো নেটে। ম্যাচের আগের দিন ঐচ্ছিক সেশনেও তিনিই প্রথম। বছর ধরে এই শৃঙ্খলার সাক্ষী তামিম তাই লিখেছেন—


সম্পর্কিত

“বাংলাদেশের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে ১০০ টেস্ট খেলার যোগ্যতা তোর চেয়ে বেশি আর কারও নেই। ভবিষ্যতে অনেকেই হয়তো এই মাইলফলক ছুঁবে, কিন্তু প্রথম যে তুই—এটা তোরই প্রাপ্য।”

এদিকে শততম টেস্টকে সামনে রেখে চলছে গুঞ্জন—এর পর কি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলবেন মুশফিক? তবে জানা গেছে, লাল বলের ক্রিকেট তিনি চালিয়ে যাবেন। সাদা পোশাকেই এখন তাঁর আন্তর্জাতিক ফোকাস।

সিলেট টেস্ট জয়ের পর অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্তও দারুণ আবেগ নিয়ে কথা বলেছেন এই অর্জনকে ঘিরে। তিনি বলেন—

“এটা শুধু একটা সংখ্যার মাইলফলক নয়—বাংলাদেশ ক্রিকেটের ইতিহাসে এই অর্জন কখনো হয়নি। আমরা চাই পুরো পাঁচ দিন উদযাপনে কাটুক। এমন মানুষকে সর্বোচ্চ সম্মান দেওয়া আমাদের দায়িত্ব।”

মুশফিক শততম টেস্টের পরও খেলা চালিয়ে যাবেন, সেই আশা প্রকাশ করে শান্ত যোগ করেন—

“আমাদের দলে এমন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার খুবই দরকার। আশা করি, তিনি আরও অনেকদিন খেলবেন, পথ দেখাবেন।”

বাংলাদেশ ক্রিকেটের প্রতিটি বাঁকে, প্রতিটি লড়াইয়ে, প্রতিটি পুনর্জাগরণে ছিলেন মুশফিক—কখনো নীরব সৈনিক, কখনো দলের প্রাণ। আগামীকাল তাঁর শততম টেস্ট শুধু একটি সংখ্যা নয়; এটি এক প্রজন্মের স্বপ্ন, এক ক্রিকেট জাতির গর্ব, এক অক্লান্ত যোদ্ধার সারা জীবনের সাধনার ফসল।

OR

Scroll to Top