মামুনুর রহমান
ফুটবল দুনিয়ায় বাংলাদেশ–ভারত ম্যাচ মানেই আলাদা উত্তেজনা, আলাদা স্পন্দন। দীর্ঘদিনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাই এই ম্যাচগুলোকে দেয় অন্য মাত্রা।
ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে হতে যাওয়া লড়াইকে কেন্দ্র করে উত্তাপের কোনো কমতি নেই। আনুষ্ঠানিকতার খেলা হলেও মর্যাদার লড়াই বলেই ম্যাচটি পেয়েছে ‘হাই-ভোল্টেজ’ ডার্বির মর্যাদা।
ভারতের জন্য ম্যাচটি বাড়তি চ্যালেঞ্জের। প্রতিপক্ষের মাঠ, উন্মত্ত গ্যালারি, আর সাম্প্রতিক সময়ে হামজা–শমিতদের উজ্জ্বল পারফরম্যান্স—সব মিলিয়ে চাপটা মানছেন ভারতীয় দলের নতুন কোচ খালিদ জামিলও। ম্যাচ-পূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন,
“এটা চাপের খেলা। ইতিবাচক ফল চাইলে কঠোর পরিশ্রম ছাড়া উপায় নেই।”
অন্যদিকে বাংলাদেশ দলও প্রস্তুত উচ্ছ্বাসে ভরপুর। অনলাইনে টিকিট ছাড়ার মাত্র ছয় মিনিটে সব বিক্রি হয়ে যায়—যা বলে দেয় সমর্থকদের আগ্রহ কতটা। সাত বছর পর ঢাকায় ভারতকে আতিথ্য দিচ্ছে বাংলাদেশ। সেই আবেগ নিয়েই আজ খেলতে নামবেন অধিনায়ক জামাল ভুঁইয়া। তাঁর ভাষায়,
“এটা ইমোশনাল ম্যাচ, কিন্তু মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে। চাপ থাকবে, ফাউল হবে—তবু স্বাভাবিক খেলাটা খেলতেই হবে।”
বাংলাদেশ দলের নতুন শক্তি—প্রবাসী তারকারা। হামজা চৌধুরী, শমিত সোম, কিউবা, জায়ান কিংবা তারিক কাজীর আগমনে দল পেয়েছে নতুন গতি, নতুন মনোভাব। বিশেষ করে হামজার নেপালের বিপক্ষে রূপকথার মতো বাইসাইকেল গোল এখনো আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। তাঁকে নিয়ে জামাল ভুঁইয়ার মন্তব্য,“বাংলাদেশের জার্সিতে আমার দেখা সেরা গোলগুলোর একটি।”
সম্পর্কিত
অন্যদিকে ভারতীয় শিবিরে রহস্য ও সতর্কতা। পুরো অনুশীলনই হয়েছে ক্লোজডোরে। নতুন কোচ তরুণদের দিয়ে ভবিষ্যতের দল সাজাচ্ছেন। ফলে আজকের ম্যাচটি গুরপ্রিত সিংহ কিংবা সন্দেশ জিংগানদের শেষ আন্তর্জাতিক ম্যাচও হয়ে যেতে পারে।
অবশ্য পরিসংখ্যানে এগিয়ে ভারত
দুই দল এখন পর্যন্ত ২৮ বার মুখোমুখি হয়েছে। বাংলাদেশ জিতেছে ৩টি তে।ভারত জিতেছে ১৩টি। আর ড্র হয়েছে ১২টি ম্যাচ।
সর্বশেষ ২০০৩ সালের সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে ভারতকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর দীর্ঘ ২২ বছর কেটে গেলেও আর জয়ের দেখা পায়নি লাল-সবুজরা। তবে সাম্প্রতিক পরিসংখ্যান বলছে—শেষ পাঁচ ম্যাচের চারটিই ড্র, আর একটিতে ভারত জিতেছে ২-০ গোলে। ব্যবধান তাই আগের মতো বড় নেই।
ম্যাচটি জিতলে গ্রুপে তিন বা চার নম্বরে শেষ করার সুযোগ আছে বাংলাদেশের সামনে। তবে তার চেয়েও বড় বিষয়—সমর্থকদের ভালোবাসা, আত্মসম্মান, আর প্রতিপক্ষকে বার্তা দেওয়া যে বাংলাদেশ ফুটবল এগোচ্ছে নতুন পথে।
ম্যাচটি তাই শুধু ৯০ মিনিটের লড়াই নয়। এটি আবেগের, ইতিহাসের, আর ফুটবলীয় আত্মপরিচয়ের লড়াই।
বাংলাদেশ কি পারবে ২২ বছরের অপেক্ষা ভাঙতে? জবাব মিলবে রাতের আলো, গ্যালারির গর্জন আর মাঠের প্রতিটি মুহূর্তে।





