বাংলা চলচ্চিত্রের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়— সালমান শাহ। তার অকাল মৃত্যু যেন আজও সিনেমাপ্রেমীদের মনে এক অমোচনীয় রহস্য হয়ে আছে। ১৯৯৬ সালের সেই দিনটির পর কেটে গেছে প্রায় তিন দশক, তবু সময় মুছে দিতে পারেনি ভালোবাসা, কান্না আর প্রশ্নের রেখাগুলো।
সাম্প্রতিক সময়ে আদালতের নির্দেশে সালমান শাহর অপমৃত্যু মামলা এখন হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ করার পর আবারও আলোচনায় এসেছে এই কিংবদন্তি নায়কের মৃত্যু। সালমান শাহর মা নীলা চৌধুরীর পক্ষে তার ভাই মোহাম্মদ আলমগীর কুমকুম বাদী হয়ে এই হত্যা মামলা করেন।
এ মামলার ১১ আসামির প্রাথমিক তালিকায় নেই অভিনেত্রী শাবনূর—সালমানের বহু জনপ্রিয় ছবির সহশিল্পী। তবু মানুষের আলোচনায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের মন্তব্যে, বারবার তার নাম উঠে আসে।
অবশেষে, অস্ট্রেলিয়া থেকে নিজের নীরবতা ভাঙলেন শাবনূর। সোশ্যাল মিডিয়ায় এক দীর্ঘ পোস্টে তিনি জানালেন নিজের অবস্থান—
‘সালমান শাহ কীভাবে মারা গেছেন, তা আমি সত্যিই জানি না। আমি শুধু চাই, তার মৃত্যুর সঠিক তদন্ত হোক, এবং যে-ই দোষী হোক না কেন, তাকে যেন আইনের আওতায় এনে যথাযথ শাস্তি দেওয়া হয়।’
তিনি আরও লেখেন, ‘বিষয়টি যেহেতু বর্তমানে আদালতে বিচারাধীন, তাই শুরুতে এ নিয়ে কথা বলতে চাইনি। কিন্তু দুঃখজনকভাবে কিছু ব্যক্তি অসৎ উদ্দেশ্যে আমার নাম জড়িয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়াচ্ছেন। আমি এসব ভিত্তিহীন অপপ্রচারের তীব্র নিন্দা জানাই।’
সালমান শাহ ও শাবনূরের জুটি ছিল নব্বইয়ের দশকের সিনেমায় সবচেয়ে জনপ্রিয়। বিক্ষোভ, তুমি আমার, চাওয়া থেকে পাওয়া— প্রতিটি ছবিতে তাদের chemistry হয়ে উঠেছিল সময়ের আলোচনার কেন্দ্র। কিন্তু জীবনের মঞ্চে তাদের পথ থেমে যায় এক নির্মম ঘটনায়।
শাবনূর লিখেছেন, ‘সন্তান হারানোর বেদনা যে কত কষ্টের, তা সালমানের মা নীলা আন্টির আহাজারি দেখলেই অনুভব করতে পারি। আমি আন্টি ও তার পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি।’ এই কয়েকটি লাইন যেন পর্দার নেপথ্যের সম্পর্কের বাস্তব সাক্ষ্য দেয়। প্রিয় সহশিল্পীর মৃত্যুর তিন দশক পরও শাবনূরের কণ্ঠে সেই শোকের সুর আজও নিভে যায়নি।
সালমান শাহর মৃত্যু শুধু একটি মামলা নয়— এটি এক প্রজন্মের অনুভব, এক সময়ের সিনেমা-প্রেমের প্রতীক। প্রতিবার মামলার নতুন মোড় আসলে, ভক্তদের মনে জেগে ওঠে পুরোনো প্রশ্ন- সত্যিই কী ঘটেছিল সেই দিনে? কিন্তু হয়তো, প্রশ্নের চেয়েও বড় বিষয় এখন ন্যায়বিচারের প্রত্যাশা।
শাবনূরের ভাষায়— ‘যে-ই দোষী হোক না কেন, ন্যায়বিচার হোক—এটাই আমার একান্ত দাবি ও প্রত্যাশা।’







