গতকাল ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে “কথা বলতে চাই, কথা শুনতে চাই” শীর্ষক মুক্ত আলোচনায় সংস্কারকামী অভিনয়শিল্পীরা অভিনয় শিল্পী সংঘের বর্তমান নেতৃত্বের প্রতি কঠোর অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। তারা সাফ জানিয়ে দিয়েছেন, বর্তমান কার্যনির্বাহী ও উপদেষ্টা পরিষদকে আর তাঁদের প্রতিনিধি বা অভিভাবক হিসেবে মানতে রাজি নন।
সংস্কারপন্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, সংঘের নেতৃত্ব বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় শিল্পীদের পক্ষে না দাঁড়িয়ে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর হয়ে কাজ করেছে, যা শিল্পী সম্প্রদায়ের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা। এরই পরিপ্রেক্ষিতে তারা ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়সীমা নির্ধারণ করেছিল, যাতে অভিযুক্ত নেতারা পদত্যাগ করেন। তবে সময় পার হয়ে গেলেও সেই দাবি পূরণ না হওয়ায়, তাঁরা আনুষ্ঠানিকভাবে অনাস্থা জানান।
আলোচনায় অংশগ্রহণকারী অভিনেত্রী আজমেরী হক বাঁধন স্পষ্টতই জানান, দেশের বিভিন্ন সময়ের স্বৈরাচারী সরকারের দোসররা এখনো মিডিয়ায় সক্রিয় রয়েছেন এবং শিল্পীদের ওপর প্রভাব বিস্তার করে নিজেদের ক্ষমতা ধরে রেখেছেন। বাঁধন বলেন, “মিডিয়া রাষ্ট্রের বাইরে নয়, এখানেও অনেক দোসর রয়েছেন, যারা সুবিধা নিয়ে নিজেদের অবস্থান শক্ত করেছেন। কিন্তু আমরা তরুণরা চাই মিডিয়াটাকে অন্যভাবে দেখতে, উন্নতভাবে এগিয়ে নিয়ে যেতে।”
অন্যদিকে, অভিনেতা শ্যামল মাওলা বলেন, তাঁদের উদ্দেশ্য সংঘকে আধুনিক ও উন্নত করা, যাতে এটি আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে পারে। তিনি বলেন, “আমরা বিপরীত পক্ষ নই, আমাদের লক্ষ্য সংঘের উন্নয়ন। আমরা একই পরিবারের সদস্য, তাই সংঘের উন্নতির বিষয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন রয়েছে।”
সংস্কারপন্থী শিল্পীদের পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, তারা আলাদা কোনো সংগঠন গঠন করতে চান না, বরং সংঘের অভ্যন্তরে থেকেই গঠনমূলক পরিবর্তনের মাধ্যমে এটিকে আরও কার্যকরী এবং সদস্যবান্ধব করতে চান। অভিনয়শিল্পী মোস্তাফিজুর নূর ইমরান ২২টি প্রস্তাব উত্থাপন করেন, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, অভিনয়কে রাষ্ট্রীয়ভাবে একটি স্বীকৃত পেশা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা, এবং নতুন করে শিল্পীদের নাম নিবন্ধনের প্রক্রিয়া চালু করা।
আলোচনার শুরুতে অভিনেতা খায়রুল বাসার বলেন, “আমাদের পেশাদার হতে শিখতে হবে এবং শিল্পী সংগঠনকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে হবে। শিল্পীদের স্বার্থ রক্ষা তখনই সম্ভব হবে, যখন সকল শিল্পী এক সংগঠনের ছাতার নিচে আসবেন এবং সম্মিলিতভাবে সিস্টেম পুনর্গঠন করবেন।”
সংস্কারপন্থী শিল্পীরা বিভাজনের পরিবর্তে সবাইকে একত্রিত করে সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান। তারা বলেন, “এখন সময় এক হওয়ার, ডিভাইড অ্যান্ড রুল নীতির মধ্যে শিল্পীদের পেঁচিয়ে ফেলা উচিত নয়। আমরা চাই ভবিষ্যতের প্রজন্ম অভিনয়কে একটি সম্মানজনক ও নিরাপদ পেশা হিসেবে গ্রহণ করতে পারুক।”