ঢাকা, ৩০ এপ্রিল – ঘরের মাঠে প্রথম টেস্টেই হার। সমালোচনা এড়াতে বড়সড় জয়ের বিকল্প ছিল না বাংলাদেশ দলের। আগের ম্যাচে দুই ইনিংসে ১০ উইকেট নিয়েও দলের হার দেখেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ। তাই এবার ব্যাট হাতে জ্বলে উঠলেন। সেঞ্চুরি হাকানোর পর বল হাতেও নিলেন ৫ উইকেট। মিরাজকে সঙ্গ দিয়েছেন তাইজুল ইসলাম। আর তাতেই কুপোকাত জিম্বাবুয়ে। দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ও ১০৬ রান ব্যবধানে জিতেছে নাজমুল হোসেন শান্তর দল।
চট্টগ্রামের বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান ক্রিকেট স্টেডিয়ামে সিরিজের দ্বিতীয় টেস্টে টসে জিতে ব্যাটিংয়ে নেমে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ২২৭ রান করেছিল জিম্বাবুয়ে। জবাবে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশ তাদের প্রথম ইনিংসে ৪৪৪ রান করে বাংলাদেশ। ২১৭ রানের বোঝা নিয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে মিরাজ ও তাইজুলের ঘূর্ণিতে জিম্বাবুয়ে অলআউট হয়েছে মাত্র ১১১ রানে। আর তাতেই প্রথম টেস্টে হারের পর দ্বিতীয় ম্যাচ জিতে সিরিজে সমতা ফেরালো টাইগাররা। তৃতীয় দিনেই জিতে নিলো ম্যাচ।
জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিংয়ে নামার পর শুরু থেকেই বিপর্যয়ে পড়ে। প্রথম ইনিংসে নিয়েছিলেন ছয় উইকেট। তবে সেখানেই থেমে থাকতে চাননি তাইজুল। তাই দ্বিতীয় ইনিংসেও বল হাতে জিম্বাবুয়ের ব্যাটারদের বুকে কাঁপুনি ধরালেন। জিম্বাবুয়ের দ্বিতীয় ইনিংসের সপ্তম ওভারে জোড়া আঘাত হানেন এই স্পিনার। আর তাতেই রানের পাহাড়ে চাপা পড়া ক্রেগ আরভিনের দলের টপ অর্ডার ভেঙে পড়ে। দিনের শেষের দিকে আঘাত হানেন মেহেদি হাসান মিরাজ। ব্যাট হাতে সেঞ্চুরি করার পর বল হাতে তুলে নিলেন ৫ উইকেট। আর তাতেই দ্বিতীয় টেস্টে ইনিংস ব্যবধানে হেরেছে জিম্বাবুয়ে।
এর আগে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৯১ রান নিয়ে তৃতীয় দিন ব্যাটিংয়ে নেমে জিম্বাবুয়েকে প্রথম দুই সেশনে শুধু হতাশাই দিয়েছে টাইগাররা। দিলের প্রথম সেশনে মাত্র ১ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ করেছিল ১১৩ রান। এরপর দ্বিতীয় সেশনেও নিজেদের আধিপত্য বজায় রেখেছেন মেহেদি হাসান মিরাজ ও তানজিম হাসান সাকিব। মিরাজ তুলে দিয়েছেন তার টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় শতক। আর সাকিব অভিষেক ম্যাচেই খেলেছেন ৪১ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। তাতেই অলআউট হওয়ার আগে নিজেদের প্রথম ইনিংসে ৪৪৪ রান করে বাংলাদেশ।
২১৭ রানে পিছিয়ে থেকে ব্যাট করতে নামা জিম্বাবুয়ের শুরুটা ভালো হওয়া প্রয়োজন ছিল। তবে তা হতে দেননি তাইজুল ও নাইম হাসান। সিরিজে দুর্দান্ত ব্যাট করা ব্রায়ান বেনেটকে ৬ রানে ফেরানোর পর এক বল বাদেই আউট করেছেন আগের ইনিংসে অর্ধশতক করা নিক ওয়েলচকে। তাইজুলের জোড়া আঘাতের পর শন উইলিয়ামসকে থিতু হতে দেননি নাঈম। মাত্র ৭ রান করে সাদমান ইসলামের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন সাজঘরে। ২২ রানে ৩ উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে।
এরপর ওপেনার বেন কারান ও অধিনায়ক ক্রেগ আরভিন জিম্বাবুয়েকে ম্যাচে ফেরানোর চেষ্টা করেন। তবে সে চেষ্টাও ব্যর্থ হতে পারতো যদি মিরাজের বলে স্লিপে যাওয়া ক্যাচ লুফে নিতে পারতেন টাইগার অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত। শান্ত পারেননি, ব্যক্তিগত ১৬ রানে নতুন জীবন পান আরভিন। তবে আরভিনের নতুন জীবনকে দীর্ঘ হতে দেননি মিরাজ। সাজঘরে ফিরেছেন ২৫ রান করেই। এরপর দুই ব্যাটারকে মিরাজ ফিরেয়েছেন ০ রানে। ৪ রানের ব্যবধানে তিন উইকেট হারিয়ে আবারও চাপে পরে জিম্বাবুয়ে। ওপেনার বেন কারান ৪৬ রান করে ফিরে গেলে শেষ আশাও শেষ হয় তাদের। আর তাতেই প্রথম ম্যাচ তিন উইকেটে জয়ের পর দ্বিতীয় ম্যাচ হারতে হলো ইনিংস ব্যবধানে।
এর আগে মিরাজের পাশাপাশি এই ইনিংসে শতকের দেখা পেয়েছেন ওপেনার সাদমান ইসলাম। খেলেছেন তার ক্যারিয়ার সেরা ১২০ রানের ইনিংস। রানে ফেরার আভাস দিয়েছেন মুশফিকুর রহিমও। রান আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ৪০ রান। দীর্ঘদিন পর টেস্ট দলে ফেরা এনামুল হক বিজয় করেছেন ৩৯ রান। আর অভিষেক টেস্টে তানজিমের ব্যাট থেকে এসেছে ৪১ রান। আর তাতেই প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়িয়েছে ৪৪৪ রানে। আর জিম্বাবুয়ের হয়ে অভিষেক টেস্টে ৫ উইকেট নিয়েছেন ভিনসেন্ট মাসেকেসা।
সিরিজের প্রথম টেস্ট হেরে সিরিজ বাঁচাতে এই ম্যাচ জয়ের বিকল্প ছিল না নাজমুল হোসেন শান্ত’র দলের। তবে জয় পেলেও সিরিজ শেষ হলো ১-১ সমতায়। এই জয়কে খুব একটা বড় করে দেখার উপায় নেই। কারণ প্রতিপক্ষের মাঠ থেকে সিরিজ সমতা নিয়ে দেশে ফিরবে জিম্বাবুয়ে। তাই এই সিরিজ যুক্ত হবে জিম্বাবুয়ের প্রাপ্তির খাতায়। তবে ইনিংস ব্যবধানে জয় কিছুটা হলেও স্বস্তি যোগাবে বাংলাদেশ শিবিরে।
সূত্র: বার্তা২৪.কম
আইএ/ ৩০ এপ্রিল ২০২৫